সৃতির শ্রাবণ






এখনো সেই আগের'ই মত জল ঝরে বরষার
এখনো মেঘ কেঁদে বেড়ায় নির্বিকার ,
অজানা ব্যথায় ভাঙ্গে বুক বার বার
কষ্টের যন্ত্রণায় অশ্রু ঝরায় নিরন্তর  ।
আজ আমি আর বৃষ্টি খুব কাছাকাছি
দুজনেই আজ দাঁড়িয়েছি মুখোমুখি ,
কত'টা কষ্ট মেঘ বইয়ে বেড়ায় দেখব বলে ......
অবশেষে বুঝলাম , 
আমাদের দুজনের মাঝে শুধু পার্থক্য এইটুকু
মেঘের কষ্ট গুলো ঝরে যায় বৃষ্টি হয়ে 
আর আমি, বুকের পাঁজরে খুব যতনে পুষে রাখি ।
মেঘ তুমি আর কেঁদোনাকো এ ধরায়
আমার চাতক মনের তৃষ্ণা মিটে না যে হায় ,
চলে যাও , চলে যাও শরতের মত করে
দূরে বহু দূরে ..... চলে যাও অজানায় ...।।
ধুসর কাশ ফুলে আমি রবো মিশে ...
সন্ধ্যার নিথর নদীর জলে নেশা করে
দারিয়ে রবো নৌকোর গলই হয়ে ঠায় ...
অথবা শঙ্খ চিল হয়ে পারী জমাবো অজানায় 
চলে যাও মেঘ তুমি আর কেঁদোনাকো এ ধরায়...।
বল কি পেয়েছ তুমি আর কি'ই বা পেয়েছি আমি ?
তবুও তোমার রিমঝিম ছন্দে কেন কষ্ট গুলো আড়াল করে দাও ?
চলে যাও , চলে যাও দূরে বহু দূরে
শুধু শুধু কেন তুমি সৃতির শ্রাবণে আমাকে ভেজাও  ?



নির্জন আহমেদ অরণ্য 


 

অনন্ত প্রেম









আমারে'ই বাসিয়াছ ভাল হৃদয়ের যত মাধুরী দিয়ে
শত জনমের ক্ষুধা তোমারই মনে
আমারেই কাছে পাইবার তরে
লুটায়ে পরে প্রেম আজি তাহার কঞ্চির রূপ লয়ে
আমারে'ই বাসিয়াছ ভাল হৃদয়ের যত মাধুরী দিয়ে ।
আমারে করিয়াছ শিশিরের কণা , তুমি সবুজ ঘাস হয়ে
কোন এক নির্মল ভোরে কৃষ্ণচূড়ার তলে
শুদ্ধ হবে তুমি স্নান করে আমারই জলে
খুলিবে দল পদ্ম কমল , পাখিরা গাহিবে গান
প্রণয় এর উন্মাদ জোয়ারে ভাঙ্গিবে হৃদয়ের যত বাণ ।
ভরা পূর্ণিমার জ্যোৎস্না গিলে তুমি চাঁদকে করেছো ম্লান
আমারে দিয়াছ খুলিয়া হৃদয়ের সদর দ্বার ,
চন্দ্র-ভুক অমাবস্যার তিমির রজনী জাগি
তোমারই নয়নে গাঁথিয়া আপন দৃষ্টি প্রেমের সুধা করে যাই পান
ভালবেসে আমারেই সঁপিয়াছ সখী তোমারই প্রাণ ।
শরতের নীলে মেঘ হয়ে ভেসে যাও , কাশবন ছায়ায় ঢেকে দাও
শেষ বিকেলের আবীরে আমারে রাঙাও
কত রূপ লয়ে কত শত ছলে আমাতেই মিশে আছ জীবন হয়ে
কত নিশি ভরিয়াছ তোমার নিঘাত ভালবাসা দিয়ে
আমারে'ই বাসিয়াছ ভাল হৃদয়ের যত মাধুরী দিয়ে । 





নির্জন আহমেদ অরণ্য 

 

চাতক মন





আমি এসেছি , আমি এসেছি বৃষ্টি হয়ে
এই বরষায়......
তোমার উঠোনে অঝোরে ঝরবো বলে
আমি এসেছি ফিরে তোমার কাছে
এই তমসায়......

আমায় চিনতে পেরেছ ?
আমি ,
আমি সেই ছিন্ন ভিন্ন মেঘের মালা ...
যে একদিন তোমার শরতের আকাশের পথ ধরে
ভেসে ... ভেসে হারিয়ে গিয়েছিল
দূর অজানায়...
আমি সেই ছন্নছাড়া মেঘ ,
আমি সেই ক্লান্তিহীন ভেসে চলা মেঘ......

অনেক পুড়িয়েছি তোমায়
চৈতালি দিনে...
তোমার উর্বশী মন কে
করেছি চৌচির...
তোমার ভরা যমুনাকে করেছি
জল শূন্য ,
দিয়েছিলাম বিষণ্ণ বিকেল
আগুন ঝরা রাত......

ক্ষমা করো ,
আমায় ক্ষমা করো শেষ বারের মতো...

জানি তোমার ভালবাসা পাবার
সামান্যতম অধিকারটুকু নেই , আজ আর আমার...
তবুও ,
তবুও তুমি এই বরষায়
প্রথমও কদমের সুরভীটুকু নিও...
যত ঘৃণা ,দুঃখ , কষ্ট না হয় তুমি
আমার শূন্য আঁজলায় ভরে দিও......

একা একা আর বসে থেকনা ঘরে
এই মন খারাপ করা দুপুরে...
বাহিরে এসো
চাতকের তৃষ্ণা ভরা বুক
আজ তৃষিত করো
আমার শীতল জলে......

শালিক জোরা দেখো আজ এসেছে নীড় ফেলে
বসে আছে কৃষ্ণচূড়ার ডালে ,
বৃষ্টির জলে স্নান করবে বলে
যত নষ্ট কষ্ট ধুয়ে শুদ্ধ হবে বলে...
ফসলের ক্ষেত খাঁ খাঁ করে
আবার উর্বশী হবে বলে ,
ক্ষত বিক্ষত বুক নরম পলির অতলে
সমাধি দেবার তরে...

চলে এসো ,
চলে এসো বৃষ্টির কাছে
তোমার চাতক মন কে ভিজাবে বলে ,
শূন্য যমুনাকে নতুন জলে পূর্ণ করতে
নিজেকে সুখের জয়ারে ভাসাবে বলে ।


নির্জন আহমেদ অরণ্য
 

হায় পথিক




একা একা পথ চলতে চলতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে পরে তনু ও মন
পিচ ঢালা কালো পথ কে দুপুরের তীব্র রোদ্দুরে মনে হয় প্রতিবিম্ব ,
অথবা ,
অথবা....মনে হয় যেন শান্ত শীতল এক যমুনা ...
লাউ এর কচি ডগার মতো লিক লিক করে বেরিয়ে আসে শুষ্ক গ্রীবা
সবই আলো ছায়ার খেলা...
পথিকের তৃষ্ণা মিটে না ,
তবুও পাঁজরের অতলে তৃষ্ণাকে দিয়ে সমাধি
পথিক হেঁটে চলে তার অন্তবিহীন পথে ।
যত প্রেম যত পিছুটান সব পেছনে ফেলে
পথিক এগিয়ে চলে নিরুদ্দেশে ,
হায় পথিক খুঁজে কি পাবেনা কখনোই পথের শেষ।
পিচ ঢালা পথ ফেলে নেমে আসে মেঠো পথে.....
পথিক থামে না , পথের ক্লান্তি নেই তার ...
শুধু চলতে জানে সে ।
যেমন সোনালী ডানার চিল গুলো শুধু নীল আকাশে উড়তে জানে ,
পথিক হেঁটে চলে মেঠো পথ ধরে ...
সবুজ মাঠ , ক্ষেত অথবা হলুদ সর্ষের গালিচা ফেলে
এগিয়ে যায় অনির্দিষ্ট উদ্দেশে ।
এক সময় ক্লান্তির ভার সইতে না পেরে বীর দর্পে দারিয়ে থাকা
সূর্যটাও ঢলে পরে পশ্চিমে ,


(পৃথিবীর ঘূর্ণনের কাড়নে দিবা রাত্রির সৃষ্টি ,সূর্য তার আপন কক্ষে দণ্ডায়মান । শুধু লিখার উদ্দেশে ঐ ভাবে বলা । দুঃখিত )

শুধু পথিকের ক্লান্তি নেই,
তন্দ্রা নেই , সুখ নেই ।
সন্ধ্যার শাঁখের ধ্বনির মতো ঝিঁঝিঁ পোকারা শুরু করে দেয়
সন্ধ্যার আগমনী গান ,
নির্জনতার চাঁদরে ঢেকে যায় চঞ্চল এই পল্লব ।
পাখিদের মতো যখন সবারই নীড়ে ফিরার তাড়া ঠিক তখন ও
পথিক রয়ে যায় নির্জন অরণ্যে একা একা ।
হায় পথিক , ঘর নেই , পিছুটান নেই, হৃদয়ের গহীনে প্রেম নেই....
শুধু এক বুক কষ্ট নিয়ে তার পথ চলা ,
আ'মৃত্যু অপূর্ণ বাসনা...
পথিক জানে পথের শুরু আছে কিন্তু নেই কোন শেষ সীমানা ।
জোনাকিরা আলো জ্বেলে হাল্কা ডানায় উড়ে যায় ঝোপের ওপারে ,
মাঝে মাঝে রক্ত কণিকা শিথিল হয়ে পরে বুনো প্যাঁচার রবে ......
বাঁশ জাড়ে বাঁশ পাতারা দেয় শাণ হালকা বাতাসে ,
তিমির তপনে ভেসে থাকে পূর্ণিমা চাঁদ ।
পথিক মুগ্ধ নয়নে গ্রাস করে যায় রুপালী জ্যোৎস্না ...
অজান্তে সুর তোলে মনের বীণায় ,
কণ্ঠে ভেসে আসে চন্দ্রলোকের গান
পথিকের ভরে যায় প্রাণ ।
ধীরে ধীরে চাঁদটাও ক্ষয়ে যেতে থাকে
পথিকের কণ্ঠ ও হয়ে পড়ে শিথিল ,
এক সময় থেমে যায় পথিক ,
ঐ আধ ভাঙা চাঁদটার মতই ক্লান্তি ধীরে ধীরে
গ্রাস করে পথিকের স্নায়ু গুলো ।
ঢলে পরে পথিক ছায়াবীথি তলে , ঘুমের নেশা পান করে ।
এই অরণ্য নির্জনতা ভেদে যখন উঁকি দিবে সোনালী কিরণ ভোরে ,
পথিকের ক্লান্ত চোখ ফিরে পাবে তখন প্রাণ ।
নেতিয়ে পরা স্নায়ু গুলো সজাগ হবে নতুন উদ্যমে
পথিকের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবে পথের পড়ে ,
আবারো শুরু অন্তবিহীন পথ চলা ।
পথিকের কি বল এই
নির্জন অরণ্যের কথা মনে রবে ?


নির্জন আহমেদ অরণ্য
 

জীবনের চাহিদা




জীবনের চাহিদা



ঘুমন্ত নগড়ির নাগরিকদের বলছিনা

নিজেকে বলছি, বলছি নিজের মনকে...

আবচেতন মন আমার

শুধু আকাঙ্খার স্বপ্ন বুনে চলে....

তন্দ্রা গুলো এই নির্জনতায়

উপহাসে মেতেছে..

চোখের কর্নিশে তাদের

ক্লান্তিহীন অপেক্ষা প্রহর গুনা ,

আর মন আমার বিভিষিকা ময়

ধূসর প্রান্তরে হেটে চলে....

ক্লান্তির ভারে নুয়ে পরে শীর ক্ষনে ক্ষনে

ভাবনারা আমার নুয়ে পরা শীর তুলে ধরে

আমাকে আমার পুরোনো অতিত এ টেনে নিয়ে চলে

আশার প্রদ্বীপ জ্বেলে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে

গ্রহন লাগা সেই সুদূরে.....

আমার অশরিরী আত্মা আমাকে ফেলে চলে যায়...

শূন্য দেহটা শুধু পরে রয়,

মৃত্যুর তৃপ্ততা আমার সর্বাঙ্গে

অবুজ মন আমার তবুও আজো

জল রঙে জীবনের ছবি আকে.....

ধিরে ধিরে রাতের অন্ধকার কেটে যায়

কেটে যায় যত নিরবতা ,

ব্যস্ততার মায়াজালে বাধা পরে জীবন

শুধু আমি পরে থাকি আধারে

জীবনের সব চাহিদা ভুলে...



নির্জন আহমেদ অরণ‌্য

 

আমার সংসার

আমার সংসার

সংসার আমার
ভাঙা গড়ার খেলা নিরন্তর....
মাঝে মাঝে মনেতে উঁকি দেয়
হারানো সেই সব সোনালী অতীত,
শিশির ভেঁজা সকাল, হলুদ বিকেল ...

আজ ঝরে পরে কষ্টেরা
কৃষ্ণচূড়ার মতো....
ভাঙাচুরা স্মৃতি গুলোকে
জোরা লাগাতে করি ব্যর্থ চেষ্টা
দিনের পর দিন রাতের পর রাত...

কালো মেঘে ছেঁয়ে যায়
আমার আকাশ.....
সংসার আমার তলিয়ে যায়
বিদঘূটে রাতের অন্ধকারে,
তল থেকে অতল গহিনে...

আবারো সকাল আসে
আসে ভিষন্ন দুপুর...
ক্লান্ত পায়ে উঁকি দেয় রোদ্দুর
খেলা চলে আলো ছাঁয়ার
আমার খোলা জনালায় ......

ইচ্ছের ঘোড়ায় দেই লাগাম
স্বপ্ন গুলোকে যত্ন করে তুলে রাখি সিন্দুকে ,
স্মৃতির ডায়েরী করে ফেলি বন্ধ
পাছে আমার সংসার চীরতরে
হারিয়ে যায় অন্ধকারে...



নির্জন আহমেদ অরণ্য