বিনিদ্র আমি





অমা-নিশি ভেদ করে কিছুক্ষণ পরেই উঁকি দিবে
সাগর জলে স্নান করে নতুন সূর্যটা ,
শ্মশানের নীরবতাকে ম্লান করে পাখিদের বসবে সভা
নিদ্রিত কুঁড়ি মেলিবে দল অবাক হয়ে দেখিবে বসুন্ধরা ...
কিছু ফুল ঝরে যায় অবেলায় ভোরের আলোর পায়না দেখা
পৃথিবীর ক্রন্দনে ঝরে পরে শিশির কণা ,
ভিজিয়ে দেয় সবুজ ঘাসের বুক , ঘাসেরও সুখ মিলে না
শুষে নেয় সূর্যের তাপ মুছে দিয়ে যায় একটি রাতের সাধনা ।

দাড়িয়ে আছি পাশাপাশি ,

আমি আর অযত্ন অবহেলায় বেরে ওঠা একটি বট গাছ
আমাদের দুজনার মাঝে অনেক মিল , সখ্যতা
আমাদের মাঝে এখনও কারো হয়নি দেখা মুক্ত আকাশ
দৃষ্টির সীমানা জুড়ে মেঘহীন একটি নীল আকাশ ,
ঘুম নেই , চোখের কোনে তন্দ্রার কোন অস্তিত্ব নেই
অনুভব করতে পারি শুধু বুকের ভেতর
গোপন আন্দোলনে মেতেছে অদৃশ্য কিছু যন্ত্রণা
পাঁজরের এপাশ ওপাশ ক্ষতবিক্ষত করছে ক্রমেই কেউটের ফণা ।

হালকা বাতাস এসে কাঁপিয়ে দিয়ে গেলো হিম হয়ে যাওয়া শিরদাঁড়া
বট গাছটা যেন এবার দেখবেই মুক্ত আকাশ, পেয়েছে নতুন প্রেরণা ,
সবুজ পাতায় জমে থাকা শিশির কণা গড়িয়ে একটি বিন্দু এসে পরল ললাটে
জানান দিয়ে গেলো কত নিশি বিনিদ্র আমি , তার বিহনে ।


নির্জন আহমেদ অরণ্য
 

                                   ঈশ্বর হতে চাইনি






তোমাকে ভালবাসতে চেয়েছি শুধু
তোমাকে ভালবাসার জন্য ,
আমি ঈশ্বর হতে চাইনি কখনো
চেয়েছি শুধু তোমার অঙ্গনে কৃষ্ণচূড়া হতে ।

মেহেদী হয়ে রাঙাতে চেয়েছিলাম তোমার দুটি হাত
কাঙ্গনের ঝংকারে সারাক্ষণ চঞ্চল রাঙা দুটি হাত ,
বিশ্বাস কর আমি ঈশ্বর হতে চাইনি কখনো
চেয়েছিলাম তোমার নীল দুটি চোখে অঞ্জন হতে ।

একটি কাঁটা হীন হলুদ গোলাপ অথবা -
অথবা একটি রক্তকরবী হতে চেয়েছিলাম ,
অনন্ত বাসনায় তোমার অপেক্ষায় থাকতে চেয়েছিলাম
তোমার ঐ মেঘ কালো চুলে কোন দিন যদি হয় ঠাই ।

ভালবাসার ঈশ্বর হতে নয় চেয়েছি শুধু
তোমায় ভালবেসে যেতে নিরালায় ,
অলস দুপুর জুড়ে থাকতে চেয়েছিলাম
এক জোড়া নূপুর হয়ে তোমার চপল দুটি পায় ।


নির্জন আহমেদ অরণ্য 

 

                                শূন্য পরে শিউলি তলা






মনে পরে না আজ আর শেষ কবে তোমার চোখে
ভালবাসা নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম ,
শেষ কবে তোমার হাত ধরে বৃষ্টির জলে স্নান করেছিলাম ...
চোখের কোনে জমে থাকা জল বাঁধ ভেঙ্গে ভাসিয়েছিল যে অঞ্জন
কতটা বছর রুমালের ভিতর তা পুষে রেখেছিলাম ।
মনে পরে না , আজ আর কিছুই মনে পরে না তার
চিলেকোঠায় পাশাপাশি বসে সুদূর ভাবনায়
আকাশের নীলে চোখ রেখে কতটা অবাক হয়েছিলাম
পাখিদের স্বাধীন বিচরণে ...
শেষ কবে তোমার নিঘাত ভালবাসার শীতল ছায়া তলে
উড়নচণ্ডী এই আমি পথের ক্লান্তি ভুলেছিলাম !

অঘ্রাণের এই সকালে ভেজা ঘাসের বুকে
যেতে যেতে পথে মনে পরে গেলো আজ বহুদিন পরে
একদিন ভালবাসা ছিল হৃদয়ের অরণ্য জুড়ে ,
একদিন কেউ ছিল পাঁজরের অতল তলে ...
আজ তুমি নেই ,কেউ নেই , ভালবাসা নেই
ঝরে গেছে সব ফুল , শুধু রয়ে গেছে কিছু ভুল ...
ভুল গুলো সাথে লয়ে অনন্ত পথে চলা
পিছু ফিরে আর হয়নি দেখা শূন্য পরে শিউলি তলা ...।




নির্জন আহমেদ অরণ্য 
 

গ্রহণ লাগা জীবন





ভালবাসার যোগ বিয়োগে সর্বস্বান্ত এই আমি
তবুও নির্লজ্জের মতো এখনও আরশির সামনে দাড়াই 
নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি এপাশ ওপাশ , 
আরশির বুকে ভেসে থাকা আমার অভিশপ্ত মুখ 
কালো সাদা দাঁড়ি আর উস্ক শুষ্ক চুলের বিন্যাস
সমস্ত অবয়ব জুড়ে ... এই কি আমি ,নাকি অন্য কেউ ?
মাঝে মাঝে নিজেকে চিনতে অনেক বেগ পেতে হয় আজ কাল ...
যে চোখ দুটো এক দিন ছিল গহীন অরণ্যের মতো   
হাড়িয়ে যেত তোমার নীলাভ দুটি চোখের আঙ্গিনায়
সে চোখ দুটি এখন ধোয়াটে ভীষণ , গ্রহণ কালের নির্জন স্বাক্ষর ...  
অথচ  ......
অথচ এখন তোমার পরিপাটি সাজানো জীবন, 
গুছানো এক রত্তি সংসার তোমার 
বেশ তো আছ , ভালই আছ ,
অনুভবে নেই এত টুকু কষ্টের রেষ 
তোমার বাগানে  কুয়াশার নব জলে স্নান করে এখন ফুটে ফুল 
জানালার গ্রিল ডিঙিয়ে মেঝেতে গড়াগড়ি খায় এক ফালি রোদ ... 
কানের দুলে দোলা দিয়ে যায় বৈরী বাতাস , তিক্ততা নেই অলস দুপুরে ,  
এ ঘর ও ঘর করে কেটে যায় সময় তোমার সুর তুলে নূপুরে ...
হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে ঝিলিক দিয়ে যায় সোনালী আভা তোমার খোলা চুলে ,
সন্ধ্যার অভিসার নামে অপেক্ষার আরশি নগরে , 
প্রিয় মানুষটির ঘরে ফেরার আহ্বানে ...
রাতের নির্জনতা ভেদ করে উঁকি দেয় রুপালী জ্যোৎস্না কাঁঠাল পাতার ফাঁকে
ঘুমাও তুমি , ঘুমাও প্রিয় মানুষটির বাহু বন্ধনে .........


আমিও আছি ভালই আছি একা একা 
রুপালী জ্যোৎস্নার আলো নেই , সুখের তন্দ্রা নেই  
আছে শুধু মহাকালের নীরবতা ... 
সৃতির চাঁদর গায়ে জড়িয়ে নির্ঘুম রাত জেগে থাকা ......




নির্জন আহমেদ অরণ্য