আবেগি বিকেল






মিথিলা কি করছ তুমি ওখানে

ওই গোলাপ গাছটার কাছে

এমন সুন্দর আবেগি হলুদ বিকেলে ?

দেখনা একটু এইদিকে ফিরে

ঐ আকাশের পানে তাকিয়ে ...

কি সুন্দর আবীরের রঙে সেজেছে

আকাশটা এই অবেলায় ,

ঠিক তোমার মত অপরুপ লাগছে ;

যেমনটি তুমি সাজো

বাসন্তী শাড়ি আর কাঁচা ফুলের গহনাতে ......

আর...আর ঐ ক্লান্ত সূর্য টাকে দেখ একটু;

ঐ যে ঐ দিকে পশ্চিমে

বিদায়ের প্রহর গুনতে গুনতে

কেমন রক্ত বর্না হয়েছে

ঠিক যেন তোমার ললাটের ঐ সিঁদুরের তিলক

উজ্জ্বল দ্যুতি ছড়াচ্ছে ...

আহাঃ এস তো এখানে এস

আমার পাশে এসে বস খানিক ক্ষণ

আজ তোমার হাত দুটি ধরে

পাশা পাশি বসে পৃথিবীর এই

অপরুপ সুধা পান করবো দুনয়নে ; তার পর

তার পর চিলেকোঠায় দারিয়ে দুজনে হাত তুলে

বিদায় জানাব ঐ ক্লান্ত সূর্যটাকে ,

নিঝুম সন্ধ্যার আহ্বানে ...

মিথিলা......মিথিলা , কি হবে বল

ঐ গোলাপের গাছটায় এত জল ঢেলে

যদি এমন আবেগি সময় বৃথায় যায় চলে ...... ?

ঐ গোলাপের সুরভী কি আমায়

অতটা পাগল করতে পারে বল

যতটা উন্মাদ হই আমি

তোমার অঙ্গ সৌরভে ...... ?






নির্জন আহমেদ অরণ্য
 

কতটা বদলেছি নিজেকে






আমি আর তোর জন্য পথ চেয়ে বসে থাকি না

নির্ঘুম মধ্য রাতে তোর বিহনে একা একা কাঁদি না ,

দেখ আমি কেমন করে বদলে গেছি

কেমন করে বেঁচে আছি দিব্যি তোকে ছাড়া ।

ঘামে ভেজা তোর ছেঁড়া চিঠি টেপ দিয়ে জোরা লাগিয়ে

এখন আর বুক পকেটে তুলে রাখি না ...

তোর ছবির ফ্রেমে জমেছে ধুলোর পাহাড়

তবুও এখন আর যত্ন করে মুছে রাখিনা ।

তোর হাতে লাগানো বাগানের ঐ পেয়ারা গাছটায়

জল দেইনি কতদিন...!

জল তেষ্টায় মরেছে হতভাগা অবলীলায় ,

পাষাণের মত শুনেছি কান পেতে তার আর্তনাদ

এখন তার বুকে উঁই পোকাদের বাসা !

দেখ আমি কেমন করে বদলে গেছি

আমি বাঁচতে পারি তোকে ছাড়া...!

হলুদ বিকেল অথবা পূর্ণিমা রাত এখন আর

আমাকে সুখের আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে বলেনা ভালবেসে

কাছে আয় আমার আরও কাছে আয়

জুড়িয়ে নে প্রাণ ভরে তোর দুচোখের তৃষ্ণা ...

শ্রাবণের জল ঝরে যায় আঙ্গিনায় আপন মনে

কই আমাকে তো এখন আর কাছে ডাকে না

বলেনা ওরে আয় আমার শীতল জলে

স্নান করে মিটিয়ে নিয়ে যা তোর যত তৃষ্ণা ...

এখন আমি হয়েছি অন্ধ , মনের সব কটি জানালা

হয়েছে বন্ধ ...।।

ঝরে গেলো কোন ফুল , ভাঙল নদী কোন কূল

কিছুই আমাকে আজ আর ভাবায় না ,

দেখ আমি কেমন করে বদলে গেছি

একা একা তোকে ছাড়া কেমন করে বেঁচে আছি ।

অগোছালো ঘর আমার ,অবহেলায় পরে থাকে

যে খানে যা খুশি...

মৃত লাশের মত দগ্ধ হয়েছি কত রাত

তোর সৃতির চিতা বুকে ধরে , আর এখন ......

আর এখন

খুব বেশি একটা ক্লান্ত না হলে যাওয়া হয়না বিছানাটিতে

বালিশে মাথা রাখলে আজও পাই নিঃশ্বাসে

মৃত মানুষের শরীরে ছড়ানো কর্পূরের গন্ধ ,

দম বন্ধ হয়ে আসে , যমদূতের ছবি ভেসে ওঠে চোখে

আমি প্রতি রাতে মৃত্যুর মুখমুখি হই আজও

তোর প্রেমের সর্বনাশে !

তবুও দেখ আমি বদলে গেছি কেমন করে...

কি করে বেঁচে আছি তোকে ছাড়া ......।।






নির্জন আহমেদ অরণ্য
 

নীল কষ্ট








এই যে নীল জামাটা দেখছ, যে টা আমি পরে আছি

এর ভিতরেই বুক লুকিয়ে রেখেছি ,

আর বুকের যে পাশটায় রক্ত জমে আছে নীল হয়ে

সেখানটায় আছে হৃদয় ... ।

যত নষ্ট কষ্ট সব এখানটায় পুষে রেখেছি

কোন একদিন এখানে ছিল প্রেম

ছিল প্রিয়ার জন্য সীমাহীন ভালবাসা ...

আর আজ .........

আজ ভালবাসা শুধুই কালের সৃতি

চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে

ভাঙাচুরা ধ্বংসাবশেষ ,

যার অনেকটাই সমাধি হয়ে গেছে

কষ্টের পাথর চাপায় ......।।

যে নীল শাড়িটা তুমি অঙ্গে জড়াও

বাতাসে উড়িয়ে দাও আঁচল

তার অন্তরালে খুঁজে দেখ কষ্ট পাবে কষ্ট .....

ছয়টি কুঁচির আড়ালে থাকে

ছয় রকমের কষ্ট ভাঁজে ভাঁজে ।

আমার কষ্ট গুলো আঁকড়ে থাকে

তোমার আঁচলের আলিঙ্গনে.........

নষ্ট কষ্ট মত্ত হয় এক অদ্ভুত খেলায়

বাতাসের সাথে কষ্টরা রঙ বদলায়

আর তোমাতেই মিশে থাকে নিরন্তর......।।

নীল হতে ঘন নীল হয় রক্তের কণিকা

কষ্টের তীব্রতা দিন দিন যায় বেড়ে

আর এই কষ্ট গুলো খুব যতনে তুলে রাখি

নীল জামার ভেতর যেখানে হৃদয় থাকে......

যেখানে নীল রক্ত জমাট বেঁধে আছে বুকে .........।।







নির্জন আহমেদ অরণ্য

 

প্রয়োজন



এখন আমার ক্লান্তি বেলা , ফুরিয়ে যাওয়ার পালা
দিনে দিনে আমি যাচ্ছিও ফুরিয়ে...
একে একে ছেড়ে যাচ্ছে আমায়
কাছের অথবা দূরের সবাই......।
বিদ্রোহী হয়েছে আমার আপন অনেক কিছুই
দুই দুয়ারি হয়েছে মন ...
ঘুম গুলো পর হয়েছে সেই কবেই
ঘুন পোকাদের মত ব্যাধি
কুরে কুরে নিঃশেষ করে চলেছে ভেতর ।
যাও ছিল এক রুদ্র নীল আকাশ
তাও আজ আর আমার নেই
ধূসর ঘন আভায় ঢেকে দিয়েছে সময় ।
এখন শুধু একা একা পরে থাকা
চার দেয়ালে বন্দী হৃদয়ের যত বাসনা
জানালার ওপারে ছোট্ট পৃথিবী আমার
তবুও চোখ মেলে হয়না দেখা ।
কিসের দহন এই পাঁজর জুড়ে
কোন অভিমানে জল এসে উঁকি দেয় চোখের কোনে
কার বিহনে শূন্য বাসর
তুলসী তলায় পরে রয় রুপোর কলস ...
কেউ জানবে না কোন দিন
কেন এই অরণ্য বিদঘুটে রাতের নির্জনতাকে
করেছিল আপন,
কেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেছে নিভৃতে দিনের পর দিন
সুখের জলসায় কেন নিজেকে ভাসাতে পারেনি
যন্ত্রণার ঘরে সঁপে দিয়েছিল কেন প্রাণ...
কেউ জানবেনা তা কোনদিন
তুমিত জান কি ছিল আমার চাওয়া
তোমাকে এই জীবনে কতটা ছিল প্রয়োজন ...।।


নির্জন আহমেদ অরণ্য
 

ঝাপসা হয়ে যায় চোখ









ঝাপসা হয়ে যায় ক্রমাগত চোখের দৃষ্টি

নিসুত রাত হয়ে যায় ভোর ,

তিমিরের বুক চীরে উঁকি দেয়

সদ্য স্নান করা হলদে সূর্যটা

আর আমার আকাশে এসে জড় হতে থাকে

অগণিত কালো মেঘের ভেলা

ধোঁয়াটে হতে থাকে আমার পৃথিবী

ঝাপসা হয়ে যায় ক্রমাগত চোখের দৃষ্টি ।

ভয় হয় খুব একা একা

শিরদাঁড়া হিম হতে থাকে নিজের অজান্তে

দেহের ভিতরে শুরু হয় কম্পন

হৃদয়ের ভেতরে জাগে সংশয়,

এই বুঝি শুরু হল কালবৈশাখীর ঝর

লণ্ডভণ্ড করে দিল নাকি আমার একমাত্র আশ্রয়

ঝাপসা হয়ে যায় ক্রমাগত চোখের দৃষ্টি ।

শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জরিয়ে ধরি খুঁটি

তবুও যেন সে আমার আপন নয়

সে যেন আমার নয় ......

সে আমার হতে পারেনা

বুকের গভীরে অট্টহাসিতে মেতে উঠে

আবারও অজানা সংশয় ,

একা একা আমার বাড়তে থাকে ভয়

ঝাপসা হয়ে যায় ক্রমাগত চোখের দৃষ্টি ।

আমি তলিয়ে যাই উত্তাল সমুদ্র বক্ষে

আর করে যাই যন্ত্রণার বিষ পান নীরবে ,

জানালার গ্রিলে আশ্রয় নেয়া বুনো লতাটাও

তার এক হাত গ্রীবা দুলিয়ে দুলিয়ে উপহাসের ছলে

হেসে যায় নিরন্তর।।

আমি বাক শূন্য হয়ে যাই প্রচণ্ড ভয়ে , আর

ঝাপসা হতে হতে ভয়ার্ত চোখ হারায় দৃষ্টি শক্তি ।








নির্জন আহমেদ অরণ্য
 

আমি যে ভুলে যাওয়ার মতো কেউ নই মিথিলা



আমায় মনে পরবে তোমার মিথিলা
আমি যে ভুলে যাওয়ার মতো কেউ নই তোমার জীবনে
আমার ভালবাসার কোন ক্ষয় নেই , শেষ নেই
আমৃত্যু তোমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হবে আমার নিঘাত প্রেমের দংশনে
চোখের কোন থেকে কাজল গড়িয়ে পরবে নোনা জলের ঢলে মনেরই অজান্তে
আমায় তোমার মনে পরবে , যে ভাবে হারানো অতিত মনে পরে
যে ভাবে মনে পরে জীবনের লেন দেন , পাওয়া না পাওয়া
সীমাহীন চাওয়ার তীব্র বাসনা ...
আমি যে ভুলে যাওয়ার মত কেউ নই তোমার জীবনে ।
আমার ভালবাসা স্বার্থ পরের মত ছিনিয়ে নিবে তোমার সুখের নিদ্রা
তোমাকে অস্থির করে তুলবে রাতের পর রাত
বিছানায় এপাশ ওপাশ করে তুমি শুধু আমায় খুঁজবে
না পাওয়ার যন্ত্রণায় বালিশের বুকে মুখ গুঁজবে তুমি,
দু চোখ থেকে নিরবে ঝরাবে অবিরাম বৃষ্টি ধারা
আমি যে ভুলার মত কেউ নই তোমার জীবনে
জীবনের চলার পথে বল সব কিছু কি ভুলে যাওয়া যায় ?
যখন আমি থাকবনা তোমারি পাশে তখন
কে রাঙাবে তোমার প্রথম সকাল ভোরের স্নান করা রবি কিরণ হয়ে ?
তাজা ফুল তুলে এনে কে ছড়িয়ে দিবে তোমার শিথানে
ভালবেসে কে ভাঙাবে তোমার অলস ঘুম বুকে জড়িয়ে ?
মেঘ কাল চুলে কে বুলাবে হাত সিঁথির পথ ধরে এত আদরে ?
ভেঙ্গে যাবে বুক জানি অজানা সংশয়ে ,মনের গভীরে শুরু হবে জলোচ্ছ্বাস
ভেঙ্গে যাবে চোখের বাঁধ , শুধু শুনবেনা সেদিন কেউ আর হৃদয় ভাঙ্গার আওয়াজ ,
আমি যে ভুলে যাওয়ার মত কেউ নই তোমার জীবনে
আমায় মনে পরবে তোমার জীবনের প্রতিটি বাঁকে ।
অলস দুপুরে কি বল মন বসে প্রেমের কোন গল্পের বই এ
অথবা হৃদয় ভাঙার কোন বিরহী গানের স্বরলিপি তে ?
হারানোর বেদনা তোমাকে তখন কুরে কুরে খাবে
তোমার অনুভুতি গুলো যে আমার জীবনের সাথে গুল্মের মত জরিয়ে আছে
অরণ্য ভালবাসার প্রয়োজন তোমাকে নিঃশেষ করে দিবে
তোমাকে কাঁদাবে মিথিলা , ভীষণ কাঁদাবে আমার নিঘাত ভালবাসা
যে ভাবে আমার দু চোখ তুমি ভাসিয়ে ছিলে অঝোর শ্রাবণে ,
আমি যে ভুলে যাওয়ার মত কেউ নই মিথিলা তোমার জীবনে
আমৃত্যু আমার ভালবাসা তোমাকে কাঁদাবে ।
শেষ বিকেলের গোধূলি এর আবীর রঙ এর মত
তোমার হৃদয় থেকে ঝরে যাবে রক্ত শ্রাবণ
তোমার মনে পরবে তখন কে ছিল তোমার এতটা আপন
কে পেত যন্ত্রণা ফুল তুলতে যেয়ে কাঁটার আঘাতে তুমি ব্যথা পেলে ,
কে সাজাত তোমার নির্জন সন্ধ্যা জোনাকির আলোতে
কে তোমার অধরে ভালবাসা একে দিত আপন অধরের পরষে ,
কে দোলা জাগাত তোমার হৃদয়ের গহীন অরণ্যে এত ভালবেসে
পূর্ণিমা রাতের রুপালি জ্যোৎস্না ভেজা ক্ষণে একদিন
কে ছিল তোমার পাশে ভালবেসে হাত দুটি জড়িয়ে ?
আমার ভালবাসা তোমাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষণে কাঁদাবে
যতটা আঘাতে আমার দু চোখ থেকে ঝরে যায় মিথিলা বৃষ্টি নিরবে ।


নির্জন আহমেদ অরণ্য